চলনবিলে সরিষার ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ
মোঃ শাহাবুদ্দিন সেলিম,স্টাফ রিপোর্টার
উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে সরিষা ফুল প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করছে। দূর থেকে মনে হয় যেন হলুদ চাদর। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। এ দৃশ্য দেখে দুচোখ ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন।
অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভালো দাম পাওয়ায় এবার সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। কুয়াশা উপেক্ষা করে ক্ষেত পরিচর্যা করছেন তারা । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৮৭ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে গত বারের চেয়ে ২৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে ১ কেজি বীজ ও বিভিন্ন ধরনের ৩০ কেজি করে প্রণোদনা হিসেবে ৪১ হাজার ২০০ কৃষককে সার দেওয়া হয়েছে। এবার বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-৯১ ও বিনা ৪ ও ৯ জাতের উন্নত মানের সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উন্নত জাতের সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণ, প্রণোদনা দেয়ায় উৎপাদন বেড়েছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন এবং জেলায় সরিষার আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। জেলায় গত বছরে ৪০ হাজার লিটার সরিষার তেল উৎপাদন হয়েছিলো। এ বছর ৫৫ হাজার ৬১৬ লিটার সরিষা তেল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। ফলে দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি অনেকটা মিটবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন সরিষা চাষী মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করি। প্রতি বিঘায় ছয়-সাত মণ হারে ফলন আসে। দামও ভালো পাওয়া যায়। এ বছর এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি।’
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এক বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ দাম দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ টাকা। আর প্রতি বিঘায় খরচ বাদে লাভের পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদাও পূরণ হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে সময় মতো সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন তারা। এ বছরের মতো আগামীতেও ভালো দাম পাবেন বলে তাদের আশা।
আদর্শ মৌ খামারের মালিক মোঃ শাজু ইসলাম জানান, ‘সরিষার ক্ষেতে এবার ২ শতাধিক মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। এতে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ৫ মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার ক্ষেতে মৌ বাক্স বসানোর কারণে সরিষার ফলনও বাড়ে। খাঁটি মধু কিনতে অনেকেই মাঠে আসছেন।’