শৈশবের টানে, বিদ্যালয় প্রাণে” শ্লোগান নিয়ে আয়োজন করা পুনর্মিলনীতে ছিল প্রাণের ছোয়া। ছোট বড় সবাই এক সাথে নেচে গেয়ে উনন্দে মেতে উঠেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। পুরনো বন্ধুদের টানে লাল দালানের ক্যাম্পাসে অনেকেই এসেছেন সাত সমুদ্র তের নদী অতিক্রম করে। কেই এসেছেন আমেরিকা থেকে। আবার কেউ এসেছেন লন্ডন থেকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মজীবন ছেড়ে এসেছেন অধিকাংশ সাবেক ছাত্র। স্ত্রী ও সন্তান নিয়েও আসেন অনেকেই প্রিয় আঙ্গিনাকে দেখাতে।
উৎসব শনিবার সকালে শুরু হলেও কয়েকদিন আগে থেকেই জেগে উঠে ক্যাম্পাস। আল্পনা, আতশাবাজির রোশনাই, মনমুগ্ধকর লাইটিং আর সুরের মুর্চনায় অনুষ্ঠানের আগের রাতেই এক পসলা উৎসব হয়ে যায় হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের সর্বত্র সাজানো হয় মনের মাধুরি মিশিয়ে।
সাবেক কৃতি ছাত্রদের ফেস্টুনের পাশাপাশি সাবেক শিক্ষকদের ফেস্টুনের সামনে দাড়িয়ে স্মৃতিকাতর হন সবাই। ছিল প্রয়াত ছাত্রদের ছবি সম্বলিত বিল বোর্ড। সেখানে প্রিয় বন্ধুর ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হন সবাই। সুন্দর সুন্দর সেলফি স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে ছবি তোলার জন্য ছিল রিতিমত লাইন। স্কুল জীবনে যে ক্যান্টিন থেকে টিফিন দেয়া হত সেই জলযোগের স্টলেও ছিল লম্বা লাইন।
শনিবার সকাল থেকেই বর্তমান ও সাবেক ছাত্ররা উপস্থিত হতে থাকেন হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলের বাদক দলকে সামনে রেখে সকাল সাড়ে ৮টায় স্কুলের প্রধান ফটকের সামন থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। মূল ব্যানারে উৎসব উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও কৃতি ছাত্ররা এবং পরে ব্যাচ ভিত্তিক সবাই শোভাযাত্রায় ভুভুজেলায় সুর তুলে আর নেচে গেয়ে অতিক্রম করেন প্রধান সড়ক। বর্তমান ক্ষুদে ছাত্ররা তাদের সাথে পাল্লা দিতে রিতিমত দৌড়াতে থাকে। এভাবেই আবারও শোভাযাত্রাটি এসে শেষ হয় ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকের ফটক দিয়ে। নাস্তা গ্রহণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহির। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও স্মৃতিচারণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতির বক্তৃতা করেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ট ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হতে হবে যোগ্য নাগরিক তৈরি করা। আগামী প্রজন্মকে দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন নাগরিত তৈরি করতে শিক্ষকদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে এ্যালামনাই সেটি অত্যন্ত শক্তিশালী। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিছু করা যায়। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এ্যালামনাইদেরকে সমাজের ভাল কাজে অবদান রাখার আহবান জানান তিনি।
পুনর্মিলনী কমিটির আহবায়ক এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এডভোকেট মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহীন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আলফাজ উদ্দিন। স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব সফিউল আলম, অলিম্পিক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছুদ্দিন, নাট্য ব্যাক্তিত্ব জুনা চৌধুরী প্রমুখ। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে হুইল চেয়ারে করে আসেন স্কুলের ১৯৪৭ সালের ব্যাচের ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত এয়ার সার্জেন্ট নুরুল হোসেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া তার সহপাঠী। স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগদিতে পেরে তিনি আবেগে আপ্লুত হন। তবে কোন বন্ধু বান্ধব নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
আমেরিকার জর্জিয়ায় টেবিল টেনিস প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন এই স্কুলের সাবেক ছাত্র ও সাবেক জাতীয় টেবিলি টেনিস তারকা শাহেদ। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে ৯৪ ব্যাচের এই ছাত্রের আনন্দের সীমা নেই। তারই বন্ধু খাজা বিমানের এয়ার হোস্টেস রিয়াদ থেকে শনিবার ভোর বেলা ঢাকায় আসেন। এসে সরাসরি চলে আসেন স্কুলে। সবাইকে কাছে পেয়ে ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তার। লন্ডন থেকে স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগদিতে আসেন বৃন্দার সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি নজমুল আজিজ জুবায়ের। এই অনুষ্ঠানে এসে পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তিনি ছিলেন মধ্যমনি।
সরকারী কাজে ব্যস্থতার মাঝেও পুলিশ সুপার টেলিকম ড. চৌধুরী জাবের সাদেক স্মৃতিকাতার হলে বললেন‘ অনুষ্টানে এসে জানতে পারলাম আমি যে প্রতিষ্ঠানে লেখপড়া করেছি সেই বুয়েটের প্রথম ভিসি ড. রশিদ এই স্কুলে পড়েছেন। আরও অনেক কৃতি ব্যাক্তিকে জন্ম দিয়েছে এই প্রতিষ্টান। সুন্দর আয়োজনের জন্য তিনি আয়োজনকদেরকে ধন্যবাদ জানান। সাবেক অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় সুন্দর আয়োজন হয়েছে। চাকুরী জীবনের প্রথম দিকে স্কুলের শত বছরে পুর্তি অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। অন্য রকম ভাল লাগার অনুভূতি হচ্ছে এই আয়োজনে আসতে পেরে। আরও ভাল লেগেছে আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে।