কুষ্টিয়ায় সরিষার ফুল যেন বিস্তৃর্ণ চরে হলুদ গালিচার বিছানা
হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃপদ্মানদীর কুলঘেঁষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম চর জগন্নাথপুর। বিস্তৃর্ণ চরের মাঠ জুড়ে প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সরিষা আবাদ করেছেন। এখন চরাঞ্চলে যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। সরিষার ফুল যেন বিস্তৃর্ণ চরে হলুদ গালিচার বিছানা বিছিয়েছেন।
এতে সেজেছে সৌন্দর্যের অপরূপ রূপে। সরিষা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা চরাঞ্চল। সেখানে মৌছিরা গুঞ্জন তুলে ফুলে ফুলে মধু পান করছেন।
শুধু চর জগন্নাথপুর গ্রামই নয়, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে এবার সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। যা কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি জমি। সরিষার ফুল ফসলের মাঠে শোভা বাড়াচ্ছে। সৌখিন মানুষ মাঠে ছুটে যাচ্ছেন ছবি তুলতে।
তবে কৃষকদের ভাষ্য, সপ্তাহখানেক আগে অসময়ের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে সরিষা ফুল ঝরে গেছে। ফলে গাছ ভাল হলেও ফলন কম হওয়ার শঙ্কা করছেন তাঁরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বাজারে তেলজাত পণ্যের দাম বেশি থাকায়, অল্প সময় ও কম খরচে ফলন বেশি হওয়ায় এবং কৃষকদের মাঝে সময়মত প্রণোদনার বীজ ও সার প্রদান করায় উপজেলায় দুই হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি।
এবছর উপজেলা বিনা সরিষা – ৪, ৯, ১৪ ও ১৭ জাতের আবাদ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি বছরে প্রায় ৪ হাজার ৯৭০ জন কৃষককে প্রণোদনার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর মাঠে সরেজমিন গিয়ে যায়, পদ্মানদীর কোলে বিস্তৃর্ণ চর জুড়ে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। সরিষার হলুদ ফুল বাতাসে দোলা দিচ্ছে। ফুলে মৌমাছি ভনভন করছে। কয়েকজন কৃষক ক্ষেতে সার বুনছে। প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে এসে সেলফি তুলছেন।
এসময় কৃষক জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ৩৩ শতকের আড়াই দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গাছ ও ফুল খুব ভাল হয়েছে। গতবছর প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাড়ে সাত মণ করে সরিষা উৎপাদন হয়েছিল। তবে বৃষ্টির কারণে এবার ফলন কিছুটা কম হবে বলে ধারণা করছি।
সোহরাব উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, বাজারে দাম বেশি, ফলন ভাল ও কময়ের ফসল ঘরে তোলা যায়। সেজন্য সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে দিনদিন। আমি প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বিনা সরিষা -১৪ আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি বিঘায় ৬ মণ করে ফলন পাবেন তিনি।
মহেন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক জিয়াদুল ইসলাম জানান, তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি চরে চাষাবাদ করেন। সেখানে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বিস্তৃর্ণ চর জুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ ছবি তুলতে আসেন।
গত বছর বৃষ্টিপাত ও পোকার আক্রমণে সরিষা নষ্ট হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল আছে। সরিষার গাছও ভাল হয়েছে। কৃষকরা ভালভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীস কুমার দাস জানান, বাজারে তেলজাত পণ্যের দাম বেশি থাকায়, অল্প সময় ও কম খরচে ফলন বেশি হওয়ায় এবং কৃষকদের মাঝে সময়মত প্রণোদনার বীজ ও সার প্রদান করায় উপজেলায় দুই হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি। প্রায় ৪ হাজার ১২৮ মেট্রিকটন সরিষা আবাদের প্রত্যাশা করছেন তিনি। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ফলন কম হতে পারে বলে তিনি জানান।